ইউনিয়ন পরিচিতি
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া নিন্ম চরাঞ্চল ইউনিয়ন। যা উপজেলা হতে ৮ কি:মি: দূরে অবস্থিত। সাতপোয়া ইউনিয়নের উত্তরে মাদারগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলা, উত্তর -পশ্চিম কোনে বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলা, পূর্বে সরিষাবাড়ী পৌরসভা অবস্থিত। তবে আর্শ্চায্য জনক একটি বিষয় পরিলক্ষিত যে, বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় দহগ্রাম একটি ইউনিয়ন রয়েছে সেখানে যেতে হলে ভারতের তিন বিঘা করিডোর পেরিয়ে যেতে হয় । তেমনি এই সাতপোয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দেয়ারকৃষ্ণাই একটি গ্রাম যা সরিষাবাড়ী পৌরসভার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত অর্থাৎ সাতপোয়া ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে পৌরসভা পেরিয়ে যেতে হয়। কিভাবে এ এলাকা বন্টন হয়েছে বুঝা মুসকিল । এই গ্রাম প্রায় ২০০ পরিবারের বসবাস। বলা যায় তারা সাতপোয়া ইউনিয়ন এবং পৌরসভার প্রায় নজরের বাহিরে। এই ইউনিয়নে নদী আছে নাব্যতা নাই । বর্ষা মেীসুমেও এর স্রোত থাকে না।
বিবরন | পরিমান |
| বিবরন | পরিমান | ||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
জনগোষ্ঠী ও ভৌগোলিক অবস্থাঃ |
| অবকাঠামোঃ | ||||||
আয়তন | ১৬.৬৪ ব:কি:মি: | ঘরবাড়ী | ৭৯৯৫টি | |||||
মৌজা | ১৫টি | মোট রাস্তা | ৭১ কি:মি: | |||||
গ্রাম সংখ্যা | ১৯টি | পাকা রাস্তা | ০৮ কি: মি: | |||||
পরিবার সংখ্যা | ৭২৩৯টি | কাঁচা রাস্তা | ৬৩ কি:মি: | |||||
মুসলিম পরিবারের সংখ্যা | ৭২৩৫টি | ইটের সলিং রাস্তা | ১ কি: মি: | |||||
হিন্দু ও খ্রষ্টান পরিবারের সংখ্যা | ৪টি | স্লুইস গেইট | নাই | |||||
মোট জনসংখ্যা | ৩৬,৮১৪ জন | কালভার্ট | ১৫টি | |||||
পুরুষ | ১৪৮২৯ জন | ব্রিজ | ১টি (৩টি নির্মানাধীন) | |||||
নারী | ১৩৯১০ জন | আয়রন ব্রিজ | নাই | |||||
শিশু | ৪৯৫০ জন | বেড়ি বাঁধ | নাই | |||||
বৃদ্ধ | ৩১২৫ জন | আশ্রয় কেন্দ্র | ১টি (উপযোগী নয়) | |||||
বিপদাপন্ন জনসংখ্যা | ৭৮২০ জন | শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ | ||||||
মুসলিম | ৩১৬১২ জন | শিক্ষার হার | ৪৫% | |||||
হিন্দু | ১৩ জন | নারী শিক্ষার হার | ৫০% | |||||
খ্রিষ্টান ও অন্যান্য | নাই | পুরুষ শিক্ষার হার | ৪৮% | |||||
সামাজিক নিারাপত্তা বেস্টনীঃ | সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় | ৭টি | ||||||
প্রতিবন্ধি ব্যক্তির সংখ্যা | ২২১ জন | রেজী: প্রাথমিক বিদ্যালয় | ৪টি | |||||
প্রতিবন্ধি ভাতা | ৮১ জন | কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় | ১টি | |||||
বিধবা | ৯৫৫ জন | মাধ্যমিক বিদ্যালয় | ৩টি | |||||
বিধবা ভাতা | ২১৫ জন | জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয় | নাই | |||||
বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা | ৫৩৪৭ জন | দাখিল মাদ্রাসা | ৩টি | |||||
বয়স্ক ভাতা | ৩৯৯ জন | এবতেদায়ী মাদ্রাসা | ৩টি | |||||
মাতৃত্বকালীন ভাতা | ২৫ জন | কলেজ | নাই | |||||
ভিজিএফ | ১৪৮০ | এতিম খানা | ’’ | |||||
ভিজিডি | ২৪০ জন | জীবন জীবিকাঃ | ||||||
কাবিখা | নাই | পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা | নাই | |||||
কাবিটা | নাই | কাঠের মিল | ৪টি | |||||
টিআর | নাই | হাট | নাই | |||||
প্রাকৃতিক সম্পদঃ | বাজার | ৬টি | ||||||
খাল | ১৩টি | মাছের ঘের | নাই | |||||
খেলার মাঠ | ৩টি | পুকুর (সরকারি/খাস) | নাই | |||||
পারিবারিক বাগান | ৪৫০ টি | ইটের ভাটা | নাই | |||||
নদী | ২টি | গভীর নলকূপ | নাই | |||||
সরকারি বা খাস পুকুর | নাই | বরফ কল | নাই | |||||
স্বাস্থ্য, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনঃ | সরকারী ও বেসরকারী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানঃ | |||||||
কমিউনিটি ক্লিনিক | ৪টি | পুলিশ ক্যাম্প | নাই | |||||
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র | ১টি | ক্লাব | ১৫টি | |||||
পিএসএফ (পুকুর ফিল্টার) | নাই | তহশীল অফিস | ১টি | |||||
টিউবওয়েল | ৫০৬৮টি | কর্মরত এনজিও | ৪টি | |||||
গভীর টিউবওয়েল | ১০টি | কৃষি অফিস | ১টি | |||||
কাঁচা পায়খানা | ২৬৭০টি | পশু সম্পদ অফিস | ১টি | |||||
আধা পাকা পায়খানা | ২৩২০টি | ভূমির প্রকৃতি ও ব্যবহারঃ | ||||||
স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা | ১০৫৭টি | ভূমির ধরন | বেলে, দোআঁশ | |||||
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতিঃ | ভূমির ব্যবহার | কৃষি ফসলি | ||||||
মসজিদ | ৫৮টি | মোট জমি | ৬২০২ হেক্টর | |||||
মন্দির | নাই | আবাদি জমি | ৩৩৩২ হে: | |||||
গীর্জা | নাই | এক ফসল জমি | ৮৫ হে: | |||||
ঈদগাহ (মসজিদ সংলগ্ন) | ৮টি | দুই ফসল জমি | ১২৯৬ হে: | |||||
কবর স্থান | ৬টি | তিন ফসল জমি | ২৮৬ হে: | |||||
খেয়া ঘাট | ৫টি | পতিত জমি | ২৫ হে: | |||||
|
| অনাবাদি জমি | ৩২০ হে: | |||||
স্থানীয় এলাকা পরিচিতিঃ
অবস্থানঃ
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন। যা উপজেলা হতে ২ কি:মি: দূরে অবস্থিত। সাতপোয়া ইউনিয়নের উত্তরে মাদারগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলা, উত্তর-পশ্চিম কোনে বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলা, পূর্বে সরিষাবাড়ী পৌরসভা, অবস্থিত।
আয়তনঃ
আয়তন ১৬.৬৪ বর্গকিলোমিটার এবং গ্রামের সংখ্যা ১৭ টি।
প্রকৃতিঃ
নদী, খাল, ডোবা, পুকুর, কাঁচা রাস্তা, বিভিন্ন ধরণের পশুপাখি ও গাছ পালায় পরিপূর্ণ। নিচু জমিতে বর্ষার মৌসুমে পানি জমে থাকে ফলে কোন ফসল হয় না, শুষ্ক মৌসুমে সরিষা, ইরি ধান, মরিচ, পাট ও ডাল ইত্যাদির চাষ হয়। নদীতে ও খালে বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। গাছ পালায় ঘেরা সবুজ প্রকৃতি খুবই মনোমুগ্ধকর।
প্রাকৃতিক সম্পদঃ
সাতপোয়া ইউনিয়নের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে জমি, নদী, খাল, পুকুর, মাছ, বৃক্ষ, পশু সম্পদ, উল্লেখযোগ্য নদী - ২টি, খাল- ১৭টি, পুকুর - ৩৪৫টি , আবাদযোগ্য জমি ৩৩৩২ একর।
যোগাযোগের অবকাঠামো ও ভৌত বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
সাতপোয়া ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ অবস্থায়, এই ইউনিয়নটি সদর উপজেলা সংলগ্ন হওয়া সত্বেও মাত্র আট কিলোমিটার রাস্তা পাঁকা। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর রাস্তা খুবই খারাপ অবস্থায় বিরাজমান। পায়ে হাটা ছাড়া মানুষ সদরে আসার তেমন কোন সুযোগ নেই। অনেক গ্রামের মানুষ নৌকা দিয়ে আসতে হয়। তাদের যোগাযোগের তেমন কোন রাস্তা নেই। বর্ষা মৌসুমে হাটু পানিতে নেমে আসতে হয়। কাঁচা রাস্তা ৫২ কি.মি. ব্রীজ ১টি, কালবার্ট-১৯টি, খেয়াঘাট-১০টি, বাজার ৬টি, ইউনিয়ন পরিষদ ১টি, ডাকঘর-১টি, হেরিংবন ১কি.মি., ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা ৩৪৮১৪জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৩৮২৯ জন মহিলা ১২৯১০ জন
শিশু ৪৯৫০ জন বৃদ্ধ ৩১২৫ জন।
শিক্ষাঃ
সাতপোয়া ইউনিয়নে শিক্ষার হার ৪২%। ইউনিয়নে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭টি, রেজিষ্ট্রার প্রাঃ বিঃ ৪টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩টি, মোট মাদ্রাসা ৬টি তার মধ্যে দাখিল মাদ্রাসা ০৩টি, এতিমখানা ৩টি, ছেলে মেয়েদের আলাদা কোন স্কুল নেই।
স্বাস্থ্য সেবাঃ
সাতপোয়া ইউনিয়নে মাত্র ০১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিক ৪টি বিদ্যমান এবং এই ইউনিয়নে মাত্র তিনটি ডিসপেনচারী বিদ্যমান চিকিৎসা সেবা নিতে হলে উপজেলায় যেতে হয়। যার কারণে এই এলাকার দরিদ্র জনগোষ্টী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। যেকোন রোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে চিচিৎসা গ্রহণ করতে হয়।
সার্বজনীন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানঃ
অত্র ইউনিয়নে প্রায় সবই মুসলমান বাস করে। তবে সামান্য কয়েকটি পরিবার হিন্দু সম্প্রদায় লোক বসবাস করে। তবে তাদের মধ্যে সর্বদা সৌহার্দ ভাব বজায় থাকে। সকলে মিলেমিশে সমজোতার মাধ্যমে কাজে এবং সামাজি, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকার সমহারে ভোগ করে থাকে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করে থাকে। একে অপরকে সার্বিক সহযোগীতা করে থাকে। এই ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার ৯৯.৯৯% মুসলমান, .০১% হিন্দু সম্প্রদায় বাস করে। নিম্নে সার্বজনীন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ তুলে ধরা হলো- বাজার ৬টি, ডাকঘর ১টি, ভুমি অফিস ১টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ৪টি, মসজিদ ৫৮টি, ঈদগাহ মাঠ ০৮টি, ক্লাব ১৫টি, খেয়াঘাট ১০টি, VDC ৪টি, কর্মরত এনজিও ঢাকা আহছানিয়া মিশন, কেয়ার বাংলাদেশ, গ্রামীন ব্যাংক, ব্র্যাক, উল্লেখযোগ্য দুর্যোগ বিষয়ক এনজিও ঢাকা আহছানিয়া মিশন।
পেশাঃ
এই সাতপোয়াইউনিয়নের প্রায় সকল মানুষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কৃষি পেশার সাথে জড়িত। এলাকাবাসীর তথ্য মতে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে পেশায় ও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে ইউনিয়নের প্রধান পেশাগুলো দেওয়া হলো- কৃষি, দিন মজুর, পশু পালন, সেলাই, রিক্সা-ভ্যান চালক।
কৃষি ও খাদ্যঃ
সাতপোয়াইউনিয়নে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৩৩৩২ একর। তবে ইউনিয়নের কৃষি নির্ভরশীল মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮৫% লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখানে সাধারণত ইরিধান উৎপাদন হয়। এছাড়া সরিষা, মরিচ, ডাল, বাদাম , আলু , সবজী ও পাট উৎপাদন করা হয়। আশ্বিন কার্তিক মাসে নিচু জমিতে সরিষার চাষ ও উচু জমিতে মরিরে আবাদ করা হয়। পৌষ মাস থেকে সেচের মাধ্যমে ইরি ধানের চাষ করা হয়। এরপর বৈশাখ মাসে পাট চাষ করে থাকে। এছাড়া অল্প কিছু ডাল চাষ করে থাকে এবং সামান্য শাকসবজি চাষ করা হয়। যার জন্য নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে বাহির থেকে আমদানি করতে হয়।
ইউনিয়নের চাষাবাদ পদ্ধতিঃ
বর্তমানে এই ইউনিয়নে পাওয়ার টিরারের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয়। তবে দুই একটি হালের বলদ দিয়ে ও চাষাবাদ হয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে সেচ কার্য চালানো হয়ে থাকে।
বনায়নঃ
অত্র ইউনিয়নে উল্লেখিত কোন বনায়ন নেই। তবে সমতল ভিটায় এবং রাস্তার পাশে কম- বেশী বনজ, ফলজ গাছপালা দেখা যায়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে ফলজ ও বনজে বাগান রয়েছে। এখানে রাস্তার ধারে কাঁঠাল, মেহেগনি, আকাশমণি ইত্যাদি গাছ রয়েছে। তবে বসত ভিটায় কাঁঠাল, আম, রজনীগন্ধা, ঘাসফল, লতা স্থল আছে। ঔষধী গাছের মধ্যে নিম, তুলসী, লতা পাতা তবে মানুষ সে হারে বৃক্ষরোপণ করে তার চেয়ে বেশী পরিমানের বৃক্ষ নিধন হচ্ছে। কারণ দিন দিন মানুষের বসতভিটা বাড়ছে।
জীব বৈশিষ্ট্যঃ
জীব বৈচিত্রের মধ্যে বৃক্ষসম্পদ, জলজউদ্ভিদ, স্থল জলজ প্রাণীকূল, দেশীয় অতিথি পাখি এবং বৃক্ষসম্পদের মধ্যে বনজ ও ফলজ বৃক্ষ উল্লেখ যোগ্য।
বনজ বৃক্ষঃ
মেহগনি, ইউক্যালিপউটাস, রেনট্রি, বাশ, কদম, শিমুল।
ঔষধী বৃক্ষঃ
নিম, তুলসী, দূর্বাঘাস, তেতুল, বাতাবি লেবু ইত্যাদি।
জলজ উদ্ভিদঃ
দুর্বাঘাস, কচুরীপানা, কলমিশাক, শেওলা ইত্যাদি দেখা যায়। দিন দিন এইসব জলজ উদ্ভিদ কমে যাচ্ছে কারণ জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের।
বন্য প্রাণীঃ
বন্য প্রাণীর মধ্যে খেকশিয়াল, বেজি, গুইসাপ, সাপ, ইঁদুর ইত্যাদি। অতিরিক্ত জনসংখ্যা জন্য বাড়িঘর তৈরির জন্য বন সংকোচন হওয়া ও মানুষে বিরূপ আচরনের জন্য, কীটনাশক ব্যবহার এছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে বন্য প্রাণী গুলো দিন দিন কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় পাখিঃ
স্থানীয় পাখির মধ্যে শালিক, দোয়েল, ঘুঘু, বক, মাছরাঙ্গা, কাক, বুলবুলি, চড়ুই, হেইচ্ছা, কবুতর, টিয়া, চিল, কুটুম, বৌ-কথাকও, কোকিল শ্যামা, ময়না, বাবুই, টুনটুনি ইত্যাদি। তবে কীটনাশক ব্যবহার, শিকার, খাদ্যের অভাব, আবাসস্থল সংকোচনের ফলে অনেক পাখি কমে যাচ্ছে।
মৎস্য সম্পদঃ
মৎস্য সম্পদের মধ্যে রুই, মৃগেল, কাতলা, বোয়াল, টেংরা, কই, শিং, চিংড়ি, শোল, টাকি, খইল্যা, মলা, পাবদা, ভেদা, চাপিলা, কাইজা, চেলা, মাগুর, আইর ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ পাওয়া যায়।
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনঃ
ইউনিয়নে পয়ঃনিষ্কাসন ব্যবস্থা সন্তোষ জনক নয়। ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিবছর গরিবদের মাঝে ল্যাট্রিন বিতরন করেন। এলাকায় মানুষ টিউবওয়েলের পানি পান করে তবে বন্যার সময় প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। তথ্য সুত্রে ইউপি ও উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।
পশু পালনঃ
এলাকায় অধিকাংশ মানুষ কম বেশী পশু পালনের সাথে জড়িত। তবে বর্তমানে খাদ্য সংকট বিচরণ স্থান ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে নতুন নতুন রোগ দেখা যায়। ফলে পশু পালনের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য পশু হলো- গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া প্রভৃতি।
সামাজিক স্তরবিন্যাসঃ
সামাজিকভাবে প্রত্যেক মানুষ সমান নয়। এই ভিন্নতাই সামাজিক স্তরবিন্যাসের সৃষ্টি করেছে। সম্পদ, ক্ষমতা ও মর্যাদার উপর ভিত্তি করে সমাজের মানুষের মধ্যে যে উঁচু-নীচু শ্রেণী বা পার্থক্য সৃষ্টি হয় তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস। সাতপোয়াইউনিয়নে সামজিক স্তরবিন্যাসের প্রভাব বিদ্যমান। এ ইউনিয়নে মধ্যবিত্ত এবং বেশীরভাগ নিম্নবিত্ত শ্রেণীর লোকের বসবাস। রাজনৈতিক ও বংশগত কারণে কিছু লোক বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা লাভ করে থাকে।
নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীঃ
সাতপোয়া ইউনিয়নে কোন নৃ-তাত্ত্বিক জন গোষ্ঠীর বসবাস নেই।
ধর্মীয়/সামজিক গোষ্ঠীঃ
সাতপোয়া ইউনিয়নে মুসলিম ও হিন্দু জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এখানে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছে। তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মকান্ডে সব শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
লিঙ্গ বৈষম্যঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হলো লিঙ্গ বৈষম্য। সাতপোয়া ইউনিয়ন এই সমস্যার ব্যতিক্রম নয়। নারী পুরুষের সামাজিক মর্যাদা ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণে এই বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যেমন সালিস, বিচার, বিবাহ, সন্তান গ্রহণ, জন্ম নিয়ন্ত্রন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীদের মতামতের তেমন ভূমিকা নেই। তবে বর্তমানে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীকে স্বাবলম্বীকরণে বিভিন্ন এনজিও’র কার্যক্রমের মাধ্যমে এ চিত্রের সার্বিক উন্নতি হচ্ছে দিন দিন।
সামাজিক মূল্যবোধঃ
সময়ের সাথে সাথে সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়। সাতপোয়া ইউনিয়নের সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক মূল্যবোধ ভালো, মন্দ ও ধর্মীয় অনুশীলন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ছোটরা বড়দের সম্মান করে, সালাম দেয়, শ্রদ্ধা করে। বড়রা ছোটদের স্নেহ করে, ধর্মবিরোধী কার্যকলাপকে তারা প্রশ্রয় দেয় না। স্ত্রীরা স্বামীদেরকে মান্য করে। অন্য পুরুষ দেখলে মেয়েরা মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়। তবে অনেকের মতে সামাজিক মূল্যবোধ বর্তমানে কমে যাচ্ছে।
প্রথা ও আইনগত অধিকারঃ
প্রথাগতভাবে নারীদের চেয়ে পুরুষের কাজের অধিকার ও প্রাধান্য বেশী । বাইরে পুরুষেরা অবাধে চলাফেরা করতে পারলে ও নারীদের পদচারনা সে ক্ষেত্রে কম। মুসলিম ও হিন্দু-ধর্মমতে নারী-পুরুষের সম্পত্তির অধিকার নির্ধারিত হয়। আইনগত জটিলতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সামাজিকভাবে নিস্পন্ন হয়।
অর্থনৈতিক কর্মকান্ডঃ
সাতপোয়া ইউনিয়নের অর্থনৈতিক উৎসের মূল ভিত্তি কৃষিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত । ৮০%- ৮৫% মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। অনেকে রিক্সা ও ভ্যান চালিয়ে, অন্যের জমিতে কাজ করে, মৎস্য চাষ ও মৎস্য আহরণ করে এবং তাঁত বুনে জীবনধারণ করে। এছাড়া কিছু লোক বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে ও ছোট ছোট ব্যবসায় করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সচল রাখছে।
সামাজিক আচার অনুষ্ঠানঃ
সাতপোয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক আচার অনুষ্ঠান প্রচলিত আছে। এই গুলোর মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠান, মিলাদ মাহফিল, আকিকা, সুন্নতে খাতনা, পহেলা বৈশাখ, নবান্ন উৎসবসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান অন্যতম। এছাড়া হিন্দুরা বার মাসে তের পুজা এবং নানা ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
ধর্মীয় কর্মকান্ডঃ
সাতপোয়াইউনিয়নে সব ধরনের ধর্মীয় কর্মকান্ড প্রচলিত আছে। যেমন মুসলমানের ঈদ, শব-ই-বরাত, শব-ই-ক্বদর, ঈদে-মিলাদুন্-নবী, মিলাদ-মাহ্ফিল, হিন্দুদের বারমাসের তের পুজা ইত্যাদি ধর্মীয় কর্মকান্ড প্রচলিত আছে।
এলাকা পরিভ্রমণ রিপোর্ট
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন। যা উপজেলা হতে ২ কি:মি: দূরে অবস্থিত। সাতপোয়া ইউনিয়নের উত্তরে মাদারগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলা, উত্তর -পশ্চিম কোনে বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলা, পূর্বে সরিষাবাড়ী পৌরসভা অবস্থিত। তবে আর্শ্চায্য জনক একটি বিষয় পরিলক্ষিত যে, বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় দহগ্রাম একটি ইউনিয়ন রয়েছে সেখানে যেতে হলে ভারতের তিন বিঘা করিডোর পেরিয়ে যেতে হয় । তেমনি এই সাতপোয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দেয়ারকৃষ্ণাই একটি গ্রাম যা সরিষাবাড়ী পৌরসভার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত অর্থাৎ সাতপোয়া ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে পৌরসভা পেরিয়ে যেতে হয়। কিভাবে এ এলাকা বন্টন হয়েছে বুঝা মুসকিল । এই গ্রাম প্রায় ২০০ পরিবারের বসবাস। বলা যায় তারা সাতপোয়া ইউনিয়ন এবং পৌরসভার প্রায় নজরের বাহিরে। এই ইউনিয়নে নদী আছে নাব্যতা নাই । বর্ষা মেীসুমেও এর স্রোত থাকে না। সাতপোয়া ইউনিয়নের এলাকার সার্বিক তথ্য জানার জন্য ইউপি সদস্য ও সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে এলাকা পরিভ্রমণ করা হয়। প্রথমেই সাতপোয়াইউনিয়ন পরিদর্শনে যাওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাবেক ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার ও সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাই। একটু সামনে আগালেই খালি জমি ও কিছু ঘরবাড়ী দেখা যায়। সেখানে আলাপচারিতায় এলাকার আপদ সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় মেম্বার জানালেন জমিগুলো খরার কারণে এবং পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা না থাকার কারণে পতিত হয়ে পড়ে আছে। এসব জমির কিছু কৃত্রিম সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে ধান, রবি শস্য প্রভৃতি ফসল চাষ করা হয় কিন্তু বেশীর ভাগ জমি খরার কারণে সেচ ব্যবস্থা না থাকায় ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। স্থানীয় একজন অধিবাসী জানালেন এই রাসত্মা বর্ষায় তলিয়ে যায়। তখন যোগাযোগ একদম অসম্ভব হয়ে পড়ে। উঁচু এলাকার কিছু কৃষক জানালেন স্যালো কিংবা গভীর নলকূপ না থাকায় চাষাবাদ বিঘ্ন ঘটে। এখানে এসে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখতে পাই। এখান থেকে একটি নদী দেখা গেল, জানা গেল নদীর তীরবর্তী এবং নীচু এলাকাগুলো বর্ষায় তলিয়ে যায়। এছাড়াও নদীভাঙ্গনের ফলে এলাকার কৃষি জমি দিন দিন বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী জানালেন প্রতি বছর এখানকার অসংখ্য জমি নদীগর্ভে চলে যায়। নদীর ধারে বসে এলাকার কিছু লোকের সাথে আলাপচারিতায় এলাকার মাটির ধরণ ও বিভিন্ন আপদ সম্পর্কে জানা যায়। নদীভাঙ্গনের কারণে এলাকার জনগণ তাদের শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে তারপরও দেখে সোনার ফসলে আবার সুখের দিন আসার। এলাকার সমাজসচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে এলাকা পরিভ্রমণ শেষ করি। যার মধ্য দিয়ে সাতপোয়া ইউনিয়নের আপদসহ মোটামুটি সার্বিক চিত্র তুলে আনা সম্ভব
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস